বৃহস্পতিবার, ১১ জুন, ২০১৫

মেকানিকাল- কি এবং কেন ??-পর্ব- ১

এই পোস্টের মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তিচ্ছু ছাত্রছাত্রী দের ইঞ্জিনিয়ারিং এর একটা ফীল্ড সম্পর্কে ধারনা দেওয়া। সাথে সাথে অতীজ্ঞানী লোকদের মাঝে প্রচলিত কিছু ভুল ধারনা দূর করা। প্রথমেই বলে রাখি এটা কোন সাবজেক্ট রিভিউ না । আমি প্রচলিত সাবজেক্ট রিভিউ এর পক্ষপাতি নই, কেননা প্রচলিত অধিকাংশ সাবজেক্ট রিভিউ তে ছাত্রছাত্রী দের প্রলোভন দেখানো হয় ,তারা যেটা চায় সেটিকেই আরো জাকজমক করে প্রকাশ করা হয় ।এখানে তেমন কিছু নাই। যেসব কারনে আমি নিজে মেকানিকাল এর প্রতি আকৃষ্ট হয়েছি সেটাই তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর সবচেয়ে প্রাচীনতম সাবজেক্ট গুলার মধ্যে একটি। আর্কিমিডিস এর গবেষনা (287-212 BC) পশ্চিমাদের খুব গভীর ভাবে প্রভাবিত করেছিল এবং এর ই ফলস্বরুপ দুনিয়ার সবচেয়ে প্রথম Steam Engine টি আবিষ্কৃত হয়েছিল 10-70 AD এর দিকে । এটা ছিল একদম ই শুরুর দিকের কথা ।এখানে বলে রাখা ভাল- এই ইঞ্জিন থেকেই কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারিং শব্দের উৎপত্তি ।এরপর আর কোন কিছুই থেমে থাকেনি। এ সম্পর্কিত জ্ঞান যত ত্বরান্বিত হয়েছে, সভ্যতা তত ত্বরান্বিত হয়েছে । এই সাবজেক্ট এও সংযুক্ত হয়েছে(এবং হচ্ছে) বিভিন্ন বৈচিত্রময় জিনিস এবং ফলস্বরুপ এটি দিনদিন আরো অধিক স্বয়ংসম্পুর্ন হয়েছে।(এই অংশটুকুর দায় দায়িত্ব উইকিপেডিয়ার) এবার আসা যাক এতে কি কি পড়ানো হয় সেটা নিয়ে। মেকানিকাল এর কোর্স গুলো সম্পর্কে এক কথায় বা একটা ছকে বলা অনেকটাই কঠিন কেননা দিন দিন এ সাবজেক্ট রিলেটেড গবেষনা যেমন হয়েছে ,টপিক্স এর সংখ্যা এবং আয়তন ও ততো বৃদ্ধি পেয়েছে । পাঠদান, গবেষণা এবং চাহিদার উপর ভিত্তি করে এর অনেক শাখা ও তৈরি হয়েছে । তারপরেও মোটামুটি প্রচলিত যে চার্ট টা আছে তা তুলে ধরার
চেষ্টা করছি-
1. Robotics
2. Nuclear Engineering
3. Power Engineering
4. Advanced Energy Systems
5. Solar Engineering
6. Petroleum
7. Fluid Engineering
8. Heat Transfer
9. Aerospace & Automobile
10. Energy Conversion
11. Fuels & Combustion Technologies
12. Ocean, Offshore & Arctic Engineering
13. Environment & Transportation
14. Noise Control & Acoustics
15. Systems & Design
16. Fluid Power Systems & Technology
17. Engineering & Technology Management
18. Manufacturing Engineering
19. Pressure Vessels & Piping
20. Applied Mechanics ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি
খুব ভালমতই জানি, ৩-৪ টা পয়েন্ট ছাড়া অধিকাংশই বোঝার কথাও না  । তবে চিন্তার কিছু নাই, একটু ব্যাক্ষা দিলেই জিনিসগুলা খুব ভালমতই বুঝতে পারবে । যেহেতু উচ্চ শিক্ষার সাথে সাথে পরবর্তি জিবনের কর্মক্ষেত্র ও জড়িত। তাই মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার রা পরবর্তিতে কি ধরনের কাজ করে সে সম্পর্কে ধারনা পেলেই পাঠ্য বিষয় গুলোর প্রয়োগ জানতে পারবে ,বিষয়গুলো সম্পর্কেও ধারনা
পরিষ্কার হবে।
যন্ত্রকৌশল এর বিভিন্ন ফীল্ড—
Basic Engineering
সংক্ষেপে বলতে গেলে এই বিশ্বে গতিশীল,স্থীতিশী
ল যত বস্তু এবং শক্তির যত রুপ আছে তার সবকিছুর সাথেই মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোন না কোন ভাবে জড়িত।
Applied Mechanics
:
মেকানিক্স বা বলবিদ্যা প্রয়োগ করা যায়না এমন কোন বস্তু দুনিয়ায় নেই।ধাতু খন্ড ,শিলা, পানি থেকে শুরু করে বিভিন্ন জটিল সিস্টেম যেমন- দালানকোঠা ,আটোমোবাইল এবং বিভিন্ন যন্ত্রেও এর প্রয়োগ রয়েছে।এই জিনিস গুলো কিভাবে কাজ করে এবং কিভাবে আরো ভাল কাজ করবে তা মেকানিক্স বা বলবিদ্যার মাধ্যমে ব্যাক্ষা করা যায়। এর প্রয়োগ বলে শেষ করা যাবেনা। আর একজন যন্ত্রকৌশলী কে
এর প্রয়োগ করতে হয় অসংখ্য ক্ষেত্রে।
Fluid Engineering:
এই পৃথিবীতে যত প্রবাহমান বস্তু আছে তার সার্বিক আলোচনা করা হয় এ শাখায়, যেমন- বাতাস ,পানি, তেল এমনকি বালু ও এর ভিতরেই পরে। বিভিন্ন ফ্লুইড মেশিন এবং সিস্টেম যেমন- পাম্প, টারবাইন, কম্প্রেসর, ভাল্ব, পাইপলাইন, হাইড্রোলিক সিস্টেম ইত্যাদি ডিজাইন মেকানিকাল এর এই শাখার অন্তর্ভুক্ত।এজন্যে বিভিন্ন ফ্লুইড এর গতিবিধি এবং ধর্ম সম্পর্কে জানতে হয় ,বিভিন্ন ধর্ম নিয়ন্ত্রন করার পদ্ধতিও জানতে হয়। ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে এর বিভিন্ন প্রয়োগ ও সফলভাবে করতে হয় এবং এই ধরনের সব কাজ ই করে একজন মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার।
Heat Transfer:
যে কোন শক্তির ব্যবহারেই তাপের উদ্ভব হতে পারে ।তাপের এই সঞ্চারন সংক্রান্ত যাবতীয় পড়াশুনা এখানেই। হাতে থাকা মোবাইল ফোন,ল্যাপটপ, এমনকি ক্ষুদ্র মাইক্রোকন্ট্রোলার থেকে শুরু করে বাস ট্রাক পর্যন্ত সব জায়গাতেই তাপের উদ্ভব হচ্ছে। যন্ত্রাংশের স্থায়িত্ব বাড়ানোর জন্য এই তাপের অপসারন করা প্রয়োজন, এবং একই সাথে তা পরিবেশ এবং যন্ত্রাংশের ক্ষতি রোধ করে সবচেয়ে উপযুক্ত পদ্ধতিতেই করতে হবে। বিভিন্ন ইলেকট্রনিক্স জিনিস্পত্র নির্মান কারী প্রতিষ্টানে এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার রা কাজ করে থাকে। দালানকোঠা বা সুবিশাল স্থাপত্য এর ভেন্টিলেশন সিস্টেম ও এর ভিতরে পরে । সারা দুনিয়ায় মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার রা এই কাজগুলো করছে দক্ষতার সাথে ।
Energy Conversion & Resources
আমরা এমন এক দুনিয়ায় আছি যেখানে শক্তির উৎপাদন বিভিন্ন রুপে রুপান্তর ছাড়া আমরা অচল। শক্তির এই রুপান্তর নিয়ে যাবতীয় পড়াশুনা এই বিষয়ে। শক্তির রুপান্তরের জন্য লাগে বিভিন্ন সিস্টেম । উদাহরণস্বরূপ Internal Combustion
Engine, External Combustion Engine, Power
Plant, Gas Turbine , Steam Turbine, Solar
Panel ইত্যাদি আরো শত শত সিস্টেম এই শক্তি রুপান্তরের কাজ গুলো করে যাচ্ছে। এই সিস্টেম গুলার ডিজাইন ,উৎপাদন ,রক্ষণাবেক্ষন ,পরিচালনা এবং গবেষণার মাধ্যমে উত্তরোত্তর উন্নয়ন ইত্যাদি যাবতীয় কাজ করে থাকে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার রাই।এছাড়া বিভিন্ন শক্তির নতুন নতুন ব্যবহার উদ্ভাবন , বিভিন্ন সিস্টেম এর দক্ষতা এবং স্থায়িত্ব বৃদ্ধি সংক্রান্ত যাবতীয় গবেষনায় ও মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার রা কাজ করে যাচ্ছে । বিশ্বের মজুদ কৃত তেল ও গ্যাস আর কয়েক শতকের ভিতরেই শেষ হয়ে যাবে। তাই বিকল্প জ্বালানীর উদ্ভাবন ও প্রয়োগ যে কতটা প্রয়োজনীয় তা এখান থেকেই বোঝা যায়। মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার দের ভুমিকা এক্ষেত্রে কতখানি তা ও বোঝা যায়।
Transportation
Transportation এর বিস্তৃতি মোটামুটি সবার ই জানা ।
কয়েকটি উল্লেখযোগ্য দিক হল-
* Aerospace & Aerodynamics
* Rail Transportation
*Marine Engineering
একজন মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার চাইলেই উপরোক্ত যে কোন ক্ষেত্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহন করে ক্যারিয়ার গড়তে পারে।
Environmental Engineering :
Noise Control & Acoustics , Solid Waste Processing ইত্যাদি আরো অনেক কিছু এর অন্তর্গত। এ সাইডে
ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ আছে অসংখ্য মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার এর।যেখানেই যন্ত্র আছে ,সেখানেই শক্তির বিভিন্ন রুপান্তর ঘটছে। আছে Vibration & Pollution
ইত্যাদি অনাকাংখিত জিনিস।যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ানোর পাশাপাশি এগুলো দূর করাও অনেক বড় বড় ইঞ্জিনিয়ারিং চ্যালেঞ্জ।আবার চকলেট বা চিপস খেয়ে মোড়ক টা আমরা ফেলে দেই। এভাবে চলতে থাকলে তো শুধু চকলেট আর চিপস এর মোড়ক দিয়েই পরিবেশ দূষীত হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তা কি হচ্ছে?কখনোই না। ফেলে দেওয়া এই মোড়ক টিই প্রক্রিয়াজাত করনের মাধ্যমে নতুন কোন জিনিস বা শক্তি তে রুপান্তরিত হচ্ছে। চকলেট-চিপস এর মোড়ক জাস্ট একটা উদাহরণ হিসেবে বললাম। বিশ্বে যত কঠিন বর্জ্য পদার্থ আছে তার সবকিছু রিসাইকেল করার পিছনেই আছে বিশাল ইঞ্জিনিয়ারিং চ্যালেঞ্জ। আর এ কাজগুলো করছে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার রাই।
Engineering Technology & Manufacturing
বিভিন্ন ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিতে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার রা সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন ভুমিকা পালন করে। সেটা ইন্ডিয়ান TATA এর মত গাড়ি নির্মান কারী প্রতিষ্ঠান ই হোক, বা বাংলাদেশের প্লাস্টিক নির্মান কারী RFL এর মত প্রতিষ্ঠান ই হোক । Product designing,
Material selection, Process ইত্যাদি চ্যালেঞ্জিং কাজগুলো এরাই করে। কাজগুলো যথেষ্ঠ সৃজনশীল এবং চাহিদার উপর ভিত্তি করে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন পরিবর্তন আনতে হয়। এমনকি যে মেশিন গুলো নতুন করে মেশিন বা প্রোডাক্ট তৈরি করছে সেগুলোও ডিজাইন এবং রক্ষনাবেক্ষন এর কাজ মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার রাই করে থাকে। মাইক্রোকন্ট্রোলার,প্রসেসর,ডায়োড,ট্রানজিস্টর ,মোবাইল,ল্যাপটপ সহ সারা বিশ্বে যত ইলেকট্রনিক্স যন্ত্রপাতি নির্মান কারি প্রতিষ্ঠান আছে,সেখানে এগুলো উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে অনেক জটিল মেশিন ।এগুলোর পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষন এর জন্যও মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার অপরিহার্য । যেখানেই ইন্ডাস্ট্রি আছে ,সেখানে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার লাগবেই। যেখানেই ইউটিলিটি প্ল্যান্ট আছে সেখানেই যন্ত্রকৌশলী দের কাজের সুযোগ আছে। এছাড়াও Materials Handling, Plant Engineering & Maintenance এর মত চ্যালেঞ্জিং কাজগুলোও এরাই করে থাকে।
System Designing:
একটা সিস্টেম এর অন্তর্গত বিভিন্ন কাজ মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার রা করে থাকে। এসব কাজের মধ্যে উল্লেখযোগ্য
কয়েকটি হল- * Dynamic Systems & Control: Where there is
a movement there must be a control… গতিশীল যে কোন সিস্টেম বা যন্ত্রের যাবতীয় ক্রিয়াকলাপ মেকানিকাল এর ই অন্তর্গত। গতিশীল বস্তুটি সিডি বা ডিভিডি ড্রাইভ এর ভিতরে ঘুর্নায়মান ডিস্ক বা মহাশুন্যে প্রেরিত কোন গতিশীল কৃত্রিম উপগ্রহ যে কোনটিই হতে  পারে। চলমান বস্তুর ঘর্ষণ প্রতিরোধ , তাপ নিঃস্বরন ,ঘুর্নায়মান বস্তুর Centre of Gravity ঠিক রাখা ইত্যাদি বিভিন্ন
কাজে মেকানিকাল এর বিভিন্ন জ্ঞান প্রয়োগ করতে হয়। * Fluid Power Systems & Technology : ধর তোমাকে একটি স্পেসশীপ এর জ্বালানী নির্ধারন এবং ব্যাবহার এর সার্বিক দিক ডিজাইন করতে বলা হল। তুমি অবশ্যই জ্বালানী হিসেবে পেট্রোল ব্যাবহার করবে না । স্পেসশীপ এর জড়তা এবং গতির দিকে নজর রেখেই তোমাকে উপযুক্ত জ্বালানী নির্ধারন করতে হবে ।অনেকসময় একাধিক জ্বালানীর মিশ্রন ও ব্যাবহার করা লাগতে পারে ।আবার সব সময় জ্বালানীর ব্যাবহার ও সমান থাকবে না, কেননা অভিকর্ষ বল ও সমান থাকবেনা সর্বত্র । এখানে স্পেসশীপ শুধুমাত্র  একটা উদাহরন হিসেবে তুলে ধরলাম। সারা বিশ্বে যত জায়গায় যত তরল জ্বালানী ব্যাবহৃত হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে হবে তার সবকিছুই নির্ধারন করতে হয় মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার দের ই ।রয়েছে উচ্চতর গবেষণার সুযোগ ও।
Nuclear Engineering
যে কোন পারমাণবিক স্থাপনাই এক একটি Heavy Industry. এসব ক্ষেত্রে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার দের Huge কর্মক্ষেত্র রয়েছে।
Pressure Vessels & Piping:
সমুদ্রের নীচের উচ্চ চাপ উপেক্ষা করে হাজার ফুট গভীরতা থেকে তেল,গ্যাস,খনিজ উত্তোলন নিশ্চই সহজ কোন কাজ নয়। আবার সহস্র মাইল পাইপলাইন এর মাধ্যমে তেল গ্যাস বিভিন্ন দেশে সরবরাহ ও হচ্ছে। হাজার হাজার ইঞ্জিনিয়ারিং চ্যালেঞ্জ এ সফল হওয়ার পরেই তা সম্ভব হয়েছে। বিভিন্ন শিল্প ও কল কারখানায় ও High Pressure vessels ,Pipelines স্থাপন ও খুব সতর্কতার সাথেই রক্ষনাবেক্ষন করা প্রয়োজন হয়। সারা বিশ্বে তেল গ্যাস খনিজ উত্তোলন এবং আমদানী রপ্তানীর পিছে শত শত কোম্পানী আছে। এই ধরনের ইন্ডাস্ট্রি গুলোতে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার দের প্রচুর চাহিদা রয়েছে।
Designing:
ডিজাইনিং সম্পর্কে নতুন করে বলবার মত কিছু নেই । ইঞ্জিনিয়ারিং এর ভাষাই হল ডিজাইনিং। ডিজাইন যে কোন জিনিসের ই হতে পারে ।ক্ষুদ্র যন্ত্র বা যন্ত্রের কোন অংশের ও হতে পারে ,আবার বিশ্ববিখ্যাত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ল্যাম্বরগিনির কোন গাড়ির মডেল ডিজাইনিং ও
হতে পারে। মানুষের কল্পনাকে বাস্তবে রুপ দেওয়ার একটা  উল্লেখযোগ্য মাধম হল এই ডিজাইনিং।পুরান যুগের গাড়িগুলো কি আর দেখা যায়?কখনোই না। ১০ বছর আগে কি মাউন্টেইন বাইসাইকেল বা রোড বাইক ছিল ?কখনোই না।এই পরিবর্তনগুলো করছে ডিজাইনার রাই।এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, এইটা তো জাস্ট আকাআকি ,তেমন আর কি,মেকানিকাল না পড়েও তো করা যায় !কিন্তু জিনিসটা শুধুই আকাআকির মধ্যে সীমাবদ্ধ না। ইচ্ছামত একটি ডিজাইন করলেই সেটা গ্রহনযোগ্যতা পাবেনা। এখানে ডিজাইন এর সাথে মিলবন্ধন ঘটতে হবে Dynamics আর Mechanics এর ও। নতুন করা ডিজাইন টি পুর্বের ডিজাইন এর চেয়ে উন্নত তর হতে হবে ,তবেই তা মানুষের গ্রহনযোগ্যতা পাবে। ডিজাইনার রা কখনোই তাদের ডিজাইনে সন্তুষ্ট নয়। আজকে তারা যে ডিজাইনটি করে বিশ্ব রেকর্ড করছে, কালকে তাদের রেকর্ড তারাই ব্রেক করছে পুর্বের চেয়ে উন্নত ডিজাইন করে।দুনিয়ার রুপ এভাবেই পাল্টেছে ডিজাইনার দের কারনেই। সাইকেল আর গাড়ী জাস্ট দুটি উদাহরণ, পানি পান করার গ্লাস টি থেকে আকাশে উড্ডয়মান বিমান সবকিছুর পেছনেই কাজ করছে লক্ষ লক্ষ ডিজাইনার। ডিজাইনার হিসেবে ক্যারিয়ার গড়ার স্বর্নসুযোগ রয়েছে ইঞ্জিনিয়ারিং এর এই শাখায়।
Robotics
মেকানিক্যাল এর অন্যতম জনপ্রিয় টপিক্স হল রোবটিক্স।যা একইসাথে ইলেক্ট্রনিক্স, প্রোগ্রামিং এবং মেকানিকাল এর সমন্বয়। অর্থাৎ ইলেকট্রনিক্স এবং প্রোগ্রামিং এর একটা উল্লেখযোগ্য অংশ মেকানিকাল এর অন্তর্গত , এবং রোবটিক্স ছাড়াও মেকানিক্যাল এ এদের আরো প্রয়োগ আছে। বাংলাদেশে মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং: Already বুঝে গেছ মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার দের ক্ষেত্র কোন কোন জায়গায় ।এবার বাংলাদেশের বিভিন্ন সাইডে খেয়াল করলেই মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার দের কর্মক্ষেত্র তুমি নিজেই বের করতে পারবে ।উচ্চতর গবেষনার সুযোগ তো থাকছেই।এরপরেও যদি কেউ বলে মেকানিকাল এর জব ফীল্ড
কম,তার জন্য সমবেদনা ।আর স্যালারী ??সেটা না হয় না ই বললাম…..
এখানেই শেষ নয়। একজন যন্ত্রকৌশলীর আরো অনেক বিচিত্র ও চ্যালেঞ্জিং কাজের সেক্টর আছে।প্রতিটা ক্ষেত্রেই নিজের সৃজনশীলতা ও দক্ষতা কাজে লাগানোর সুযোগ আছে। যন্ত্রকৌশলি দের জব ফীল্ড এর খুব সামান্য অংশই উপরে তুলে ধরা হয়েছে। ০ ডিগ্রী থেকে শুরু করে শুরু করে ৩৬০ ডিগ্রী ঘুরে আসলেও এর শেষ হবেনা।ইঞ্জিনিয়ারিং বা বাস্তব জীবন যেটাই হোক প্রতিটা ক্ষেত্রে কোন না কোন ভাবে মেকানিকাল এর প্রয়োগ খুজে পাবেই।
মেকানিকাল যাদের পড়া উচিৎ:
এবার আসা যাক আর্টিকেল এর সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন অংশ, মেকানিকাল কাদের পড়া উচিৎ সেটা নিয়ে । আমি এতক্ষন অনেক ভাল ভাল কথা বললাম, আর তুমি মেকানিকাল কে নিজের সাবজেক্ট হিসেবে চয়েজ করে ফেলবে সেটা কখনোই ঠিক না। প্রথমেই নিজে বুঝার চেষ্টা কর মেকানিকাল এর উপরোক্ত টপিক্স গুলা আসলেই তোমার ভাল লাগে কিনা । যদি ইন্টারেস্ট ফীল কর তবেই আসা উচিৎ , নতুবা নয় । মেকানিকাল কে এককথায় বলা যায় ইঞ্জিনিয়ারিং এর সবচেয়ে স্মার্ট সাবজেক্ট। কিন্তু প্রলোভন এর তাড়নায় বা স্মার্টনেস দেখানোর মানসিকতা নিয়ে যদি মেকানিকাল চয়েজ কেউ কর ,তাহলে সেটা হবে বিশাল একটা ভুল ।প্যাশন টা কে প্যাশন এর মতই রাখতে হবে সেটাকে ফয়াশন বানানো যাবে না, অন্তত মেকানিকাল এর জন্য না ।তুমি মেকানিকাল পড়লেই নাসায় চাকরী পেয়ে যাবা ,বা বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি তে তোমাকে ডেকে নিয়ে উচ্চ বেতনের চাকরী দিবে এমন ভাবা একদম বোকামি ছাড়া কিছু না। তোমাকে আগে সেই যোগ্যতা অর্জন করতে হবে , নিজের দক্ষতা কে চূড়ান্ত পর্্যায়ে আগে নিয়ে যেতে হবে । এছাড়া রয়েছে উচ্চতর গবেষনার বিশাল একটা ফীল্ড । তোমার যদি গবেষনা ধর্মি কাজ গুলো ভাল লাগে, তাহলে মেকানিকাল কে তোমার জন্য One of the perfect Subject মনে করতে পার। এখানেই শেষ না ,আরো অনেক কথা আছে ।মেকানিকাল পড়লে তোমাকে শিক্ষা জীবন থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্র পর্যন্ত এমন অনেক বিচিত্র প্রবলেম এর সঅলিউশন বের করা লাগতে পারে যে প্রবলেম দুনিয়ার কোন লোক আগে কখনো ফেস করেনাই ।প্রবলেম গুলো শুধু টেকনিক্যাল তা কিন্তু না, ম্যাথমেটিকাল ও এনালিটিক্যাল এর মিশ্রন ও থাকে।সোজা সাপটা কথা হচ্ছে ,প্রবলেম এর কোন সংজ্ঞা হয় না, যে কোন ধরনের প্রবলেম ই হতে পারে। প্রবলেম সলভিং এর দক্ষতা এবং নতুন কিছু করার মানষিকতা যত বাড়বে একজন মেকানিকালের ছাত্র/কর্মজীবি তত ভাল করতে পারবে। অনেক খারাপ পরিস্থিতির ও মোকাবিলা করা লাগতে পারে কর্মজীবনে
।এমন খারাপ পরিস্থিতে যাদের মস্তিষ্ক সবচেয়ে ভাল কাজ করবে, মূলত তাদের জন্যই মেকানিকাল..... এত বড় লেখা বা এত বেশি পাঠ্য টপিক্স দেখে ভয়ের কিছু নেই,মেকানিকাল ফীল্ড টা আরো বিশাল ,লেখা ছোট হবে কিভাবে ।সবার জন্য শুভকামনা এবং যন্ত্রকৌশল এর উত্তাল সাগরে স্বাগতম.. এতখন যা বললাম , তার গ্রহনযোগ্যতার বিষয়টি নিশ্চিত করতেও আমি বাধ্য । পুরো আর্টিকেল টি লিখতে কিছু দেশি এবং বিদেশী বিশ্ববিদ্যালয় এর ওয়েবসাইট এর সাহায্য নিয়েছি ।সাথে উইকিপেডিয়া তো আছেই ।উল্লেখযোগ্য কয়েকটির লিংক নিম্নরূপ



রবিবার, ৭ জুন, ২০১৫

এইচএসসি ফল প্রকাশ(ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবনার উপযুক্ত সময় এখনই)

আমার এক পরিচিত ব্যাংকারের কথা বলি। একানব্বই সাল। তখন, আজকের এই জিপিএ সিস্টেম ছিল না। ভদ্রলোক মির্জাপুর ক্যাডেট কলেজ থেকে বিজ্ঞানবিভাগে মেধাতালিকায় উত্তীর্ণ হলেন। বাসার সবাই খুশি। মা ভেবে রাখলেন ছেলেকে ডাক্তারী পড়াবেন। আর বাবা চায় ইন্জিনিয়ার অথবা তার মতই বিসিএস অফিসার। গোল বাধলো ছেলেকে নিয়ে। ছেলে যে কি চায়, সে নিজেই নিশ্চিত নয়। তবে হ্যাঁ, ছেলের ক্যাডেট কলেজের কয়েক বন্ধু ঠিক করলো, তারা ‘মেরিন’এ পড়বে। আর এর মধ্যে যে পালের গোদা তার যুক্তিও ছিল অকাট্য - মোটা মাইনের চাকরি, বিনা পয়সায় দেশ-বিদেশ ঘুরতে পারা, বাজার করার ঝামেলা নেই, বাড়তি কোন খরচও নেই, দৈনন্দিন জীবনের ফাইফরমাইশ থেকেও মুক্তি পাওয়া যাবে। আর কি চাই! যেহেতু, মেরিন একাডেমীতে ক্যাডেট ভর্তি পরীক্ষা অন্যান্য সকল পরীক্ষার আগেই হয়ে যায়, ভদ্রলোক মেডিক্যাল, বুয়েট অথবা বিশ্ববিদ্যালয়ে এডমিশন টেস্ট দেয়ার কোন সুযোগই পেলেন না। যথারীতি লিখিত পরীক্ষায় পাশের পরে মৌখিক আর মেডিক্যাল টেস্টের জন্য ডাক পেলেন। মৌখিক পরীক্ষা ভালই হলো। মেডিক্যাল টেস্ট নিয়ে কিছুটা টেনশন- কেননা উনি তখনই চশমা ব্যবহার করতেন । আর মেরিন-এ চোখের পাওয়ার পারফেক্ট হওয়া চাই। তবে, উনি যেহেতু, ‘প্রকৌশল’ বিভাগের জন্য নির্বাচিত হয়েছেন; কাজেই চশমার সামান্য পাওয়ার তার জন্য কোন বাধা হয়ে দাঁড়ালো না। ফাইনাল রেজাল্ট বের হলো। সিলেক্টেড । ছেলে খুব খুশি। মা পড়লেন বেজায় দোটানায় - এমন ‘প্রফেশন’ যার নাম শুনেছেন কিন্তু প্রফেশনাল কারোর সাথে মা’র কোন পরিচয় নেই। আর এদিকে, ক্যাডেট কলেজের যে বন্ধুর পরামর্শে অনুপ্রানিত হয়ে ভদ্রলোক তার ‘ক্যারিয়ার ডিসিশন’ নিয়েছেন, সে কিন্তু মৌখিক পরীক্ষার দিন অনুপস্থিত ছিল - কেননা ঐ একই দিনে তার ছিল আর্মি এডমিশন টেস্ট - আইএসএসবি।
যাহোক, ভদ্রলোকের মা’র কথায় আসি। নিজের ছেলে বলে কথা! অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে উনি তাঁর কলেজের ( মা ছিলেন সরকারী কলেজের শিক্ষয়িত্রী ) এক সহকর্মীর বাসার ঠিকানা যোগাড় করলেন। তাঁর সেই সহকর্মীর বড় ছেলে জাহাজের চীফ ইন্জিনিয়ার - এই মুর্হূতে সমুদ্রে। তাতে কি? তর সইছে না। উনি সেই চীফ ইন্জিনিয়ারের মা’র সাথে কথা বললেন। ঐ মার কাছ থেকে আরেক ক্যাপ্টেনের বাসার ঠিকানা নিলেন। প্রফেশন’টা সম্পর্কে জানার জন্য। সবাই প্রায় একই পরামর্শ দিলেন - যদিও ‘মেরিন’ প্রফেশনটা একটু একঘেঁয়ে বা মোনোটনাস, কিন্তু অনেক দেশ দেখা যায়, মাইনেটাও ভাল । আর যেহেতু, ক্যাডেট কলেজের ছাত্র, সে খাপ খাওয়াতে পারবে। ভদ্রলোকের মা নিজেকে বোঝালেন এবং ছেলের ইচ্ছার কাছে নিজেকে সমর্পণ করলেন।
এরপরের ঘটনাও খুব সহজ। দুই বছর একাডেমীতে পড়ার পর; ভদ্রলোক যথারীতি জাহাজে যোগ দিলেন। একবছর চাকরী - বন্দরে বন্দরে। জাহাজের বদ্ধ জীবন, নাবিককে অধৈর্য্য করে তুললো। উনি একটা জিআরই (GRE) বই কিনেছিলেন। ঐ বই থেকেই ইংরেজী ভকেবুলারী পড়তেন, ইনজিন রুমে। একটা ছোট নোটবুক ভরে ফেলেছিলেন নতুন শব্দ টুকে। নভেম্বর মাসে ছুটিতে বাড়ী এলেন। ডিসেম্বর মাসে আইবিএ-তে এমবিএ ভর্তি পরীক্ষা। এমবিএ কমপ্লিট করে আজ উনি ব্যাংকার। এখনও উনি যত্ন করে রেখে দিয়েছেন তার সেই তেল-মবিল মাখা ছোট নোটবুকটা।
আমাদের দেশে এরকম উদাহরন ভুরি ভুরি - যারা জীবনের মাঝপথে এসে ক্যারিয়ারের গতিপথ পরিবর্তন করেছেন। এমবিবিএস বা ইন্জিনিয়ারিং পাশ করে বিসিএস পুলিশ বা এডমিনিস্ট্রেশন (মেজিস্ট্রেট) ক্যাডারে যোগ দিচ্ছেন। আবার সাধারন বিষয় নিয়ে পড়াশুনা করার পরে, আইটি সেক্টরে ঢুকছেন। আমি বলছি না যে, এক্ষেত্রে তাঁর পড়াশুনা বৃথা যাচ্ছে। কেননা, জীবনের কোন পড়াশুনা বা অভিজ্ঞতাই বৃথা যাবার নয়। তবে, আমাদের প্রতিটি মানুষের জীবনই খুব স্বল্প সময়ের জন্য। আর তাই জীবনের লক্ষ্য স্থির করা এবং কম দরকারি ব্যাপারগুলি সময় থাকতেই ঝেড়ে ফেলা অতিব গুরুত্বপূর্ণ।
আমাদের দেশে পড়াশুনা শেষ করে নিজের পছন্দ আর যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মক্ষেত্রে প্রবেশের সুযোগ অতি সীমিত; কাজেই ব্যক্তিগত পছন্দের সাথে কতগুলি বিষয়কে বিবেচনায় আনাটা অতি জরুরী। আর যেহেতু এইচএসসি’র পরেই একজন পরিক্ষার্থী উচ্চশিক্ষার জন্য বিষয় নির্বাচন করে থাকে, কাজেই বিষয়গুলি নিয়ে চিন্তা করার সময় এখনই। আমাদের দেশে একজন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত কর্মপন্থার অনেকটাই নির্ভর করে তার বাবা-মা অথবা অপরাপর কোন অভিভাবকের সিদ্ধান্তের অথবা পছন্দের উপর। কাজেই, এইচএসসি’র পরের আজকের এই গ্রাউন্ডওয়ার্ক শিক্ষার্থী আর অভিভাবক যদি মিলিত প্রয়াসে করতে পারে, তবে তা হবে অধিকতর ফলদায়ক।
উচ্চতর পড়াশুনায় ভর্তি হবার ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে যে বিষয়গুলি বিবেচনায় আনা দরকার তাহলো - # শিক্ষার্থীর মেধা, # বিষয় বা সাবজেক্টের প্রতি ব্যক্তিগত ঝোঁক, # বিষয় বা সাবজেক্টের প্রায়োগিক প্রয়োগ, # বিষয় এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ( Admission ) অনিশ্চয়তা # পড়াশুনা চালিয়ে যাবার আর্থিক সামর্থ্য, # বর্তমান এবং ভবিষ্যত কর্মেক্ষেত্র বিষয়ভিত্তিক চাকুরী প্রাপ্তির সম্ভাবনা । এগুলির সাথে আরো একটি ব্যাপারকে বিবেচনায় আনাটা জরুরী বলে আমি মনে করি। সেটা হলো বিদেশে চাকুরী করার অথবা সেটেল্ড করার
মানসিকতা এবং তদানুযায়ী বিষয় নির্বাচন।
মেধাবী শিক্ষার্থীর প্রাথমিক সমস্যা ‘বিষয়’ নির্বাচন - যেটা আমরা লেখার শুরুতে দেখলাম। যেহেতু তার ক্ষেত্রে বিষয় অনুযায়ী ভর্তি হওয়াটা তেমন কোন সমস্যা হয় না; অনেকগুলি বিষয়ে এবং অনেকগুলি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ পেয়ে তারা দোটনায় ভোগে। স্থির করতে পারে না কোন বিষয়টিকে তার প্রাধান্য দেয়া উচিত। এক্ষেত্রে, শিক্ষার্থীর প্রয়োজন নিজের ‘ইচ্ছা’র সাথে ভবিষ্যত চাকুরীকে বিবেচনায় আনা। আজকের বিষয় নির্বাচন ভবিষ্যতে আমাকে যে ধরনের চাকুরীর সুযোগ করে দিতে পারে, তার সম্পর্কে কিছুটা জেনে রাখা ভাল। যারা ঐ ধরনের চাকুরীতে নিয়োজিত তাদের সাথে আলোচনা করা যেতে পারে। রিলেটেড চাকুরীজীবির সাথে আলোচনা করলে, সহজেই সংশ্লিষ্ট চাকুরীরতে কাজের ধরন, প্রয়োজনীয় দক্ষতা, কাজের পরিধি সম্বন্ধে একটা ধারণা পাওয়া যাবে। আমি ‘অংক’-এ ভাল এবং ভাল নম্বরও পেয়েছি; কিন্তু, গাদা গাদা যোগ, বিয়োগ করতে আমার অস্হির লাগে। তাহলেতো আমার ‘হিসাববিজ্ঞানে’ ( Accounting ) ভর্তি না হওয়াটাই শ্রেয়। কেননা, যেকোন প্রতিষ্ঠানের একাউন্টেন্ট হলে তো আমাকে সেই হিসাবই করতে হবে প্রাথমিক পর্যায়ে। আমি অংকে যেমন ভাল, আমার স্মৃতিশক্তি মন্দ নয় এবং আমি মানুষের সাথে মিশতেও পছন্দ করি - তাহলেতো আমি একজন দক্ষ ব্যাংকার হতে পারি! আবার, আমার রেজাল্ট খুব আহামরি কিছু না হলেও, আমার স্মরণশক্তি ভাল এবং আমি কিছুটা মিশুক প্রকৃতির। এরকম ক্ষেত্রে ‘কাস্টমার সার্ভিস’, ‘পাবলিক রিলেশন’-এর কাজ আমার জন্য উপযুক্ত হতে পারে। এভাবেই প্রায়োগিক পদ্ধতিতে নিজেকে স্থাপন করতে হবে ভবিষ্যতের কর্মেক্ষত্রে । এবং সে অনুযায়ী বিষয় নির্বাচন করাটা জরুরী।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, ছাত্র-ছাত্রীরা যে বিষয়টিকে জানতে বা পড়তে পছন্দ করে সেটাকেই ক্যারিয়ারের জন্য বেছে নেয়। শিক্ষাজীবন শেষে তার ক্যারিয়ারের সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে। কেননা, সেই বিষয়ের ব্যাবহারিক প্রয়োগ সীমিত। মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশের চাকুরীর বাজার অত্যন্ত সীমিত। আর্থিক সার্মথ্য সীমিত হলে, বিষয় নির্বাচনের ব্যাপারে সর্তক হওয়া প্রয়োজন। আমার দেশ-বিদেশের ইতিহাস পড়তে ভাল লাগে। কিন্তু, আমাদের দেশে কি ‘ইতিহাস’ বিষয়ে গবেষণা করার যথেষ্ট সুযোগ আছে? উত্তর হলো ‘না’। কাজেই, যে শিক্ষার্থী অনার্স এবং মাস্টার্স ইতিহাস নিয়ে পড়াশুনা করলো, পাশ করে বের হবার পরে বিশ্ববিদ্যালয় বা কোন কলেজের অধ্যাপকের চাকুরী না পেলে তাকে অন্যকোন ‘জেনারেল’ লাইনে যেতে হবে। এক্ষেত্রে তার চার বা পাঁচ বছরের পড়াশুনাটা, চাকুরী ক্ষেত্রে তেমন কোন কাজেই আসবে না। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে এরকম আরও কিছু উদাহরণ দেয়া যেতে পারে - বাংলা, ভাষাতত্ত ¡ , দর্শন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, আর্কিওলজি, মনোবিজ্ঞান, ইসলামের ইতিহাস প্রভৃতি। আর্থিক সার্মথ্যকে সমন্বয় করে এইসব সাবজেক্ট সিলেক্ট করাটা শিক্ষার্থীর জন্য জরুরী। আমি অবশ্যই এই সাবজেক্ট পছন্দের ব্যাপারে কোন নেতিবাচক মূল্যায়ণ করছি না। কিন্তু, কেউ যদি গবেষণাকর্ম আর অধ্যাপণার বাইরে ব্যাবহারিক অথবা ফলিত বিষয়ে নিজের ক্যারিয়ার তৈরী করতে চায়, তাহলে তাকে সে অনুযায়ী বিষয় নির্বাচন করতে হবে।
আমাদের দেশের বেশীরভাগ শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের নিকট উচ্চমাধ্যমিকের পরে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় বা সরকারী কলেজ এখনও প্রথম পছন্দ। কাজেই ভর্তিযুদ্ধে বেশীরভাগ শিক্ষার্থীর টার্গেট থাকে নিজের পছন্দের বিষয়ে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে স্থান করে নেওয়া। কিন্তু আসন সংখ্যা অত্যন্ত সীমিত হবার কারনে অনেক শিক্ষার্থীই তার পছন্দমত সাবজেক্টে ভর্তি হতে পারে না । ফলে, ইয়ার লস দিয়ে তারা সাবজেক্ট এবং প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনে সচেষ্ট হয়। কাজেই, ভর্তির ব্যাপারে এই বিষয়টিকে মাথায় রেখে এগিয়ে যেতে হবে। মনে রাখা দরকার যে, সীমিত সুযোগের এই দেশে শিক্ষার্থীর মানসিক দৃঢ়তা, নিজের মেধাগত অবস্থান সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা আর ভবিষ্যতকে দেখতে পারার মতাই কেবল এই বহুমুখী টানপোড়েনের অবস্থা থেকে সুন্দরভাবে উত্তরণে সহায়ক হতে পারে।
যেসব শিক্ষার্থীর আর্থিক সার্মথ্য সীমিত এবং কর্মেক্ষত্রে দ্রত প্রবেশ করাটা জরুরী, তাদেরকে বিষয় নির্বাচন করতে হবে সতর্কতার সাথে। এক্ষেত্রে প্রথমেই আসে ‘আইএসএসবি’ এবং ‘মেরিন একাডেমী’। সংবাদপত্রে সার্কুলারের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানগুলি ভর্তিপরীক্ষা নিয়ে থাকে । ‘আইএসএসবি’র মাধ্যমে দেশের ৩টি সশস্ত্র বাহিনীতে অফিসার নিয়োগ করে। অপরদিকে মেরিনে আছে দুইটি বিভাগ - ‘ইন্জিনিয়ারিং’ আর ‘নটিক্যাল’। প্রথমটি তৈরী করে জাহাজের চিফ ইন্জিনিয়ার বা প্রধান প্রকৌশলী আর পরেরটি তৈরী করে ক্যাপ্টেন। তবে মনে রাখা দরকার এই চাকুরীগুলি আর দশটা সাধারণ প্রফেশনের মতো নয়।
বর্তমান যুগ বানিজ্যের যুগ। আর বানিজ্য যতদিন থাকবে, অর্থনীতি, মার্কেটিং, ফিন্যান্স, হিসাববিজ্ঞান, ব্যবস্থাপনা, ব্যবসায় প্রশাসন, ব্যাংকিং প্রভৃতি বিষয়ের চাহিদা উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পেতে থাকবে। যারা বিভিন্ন বানিজ্যিক, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, ব্যাংক-বীমাসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে ক্যারিয়ার গড়তে আগ্রহী অথবা কিছুদিন চাকুরী করে নিজেই কোন বানিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা হবার স্বপ্ন দেখে; তারা এই বিষয়গুলি বিবেচনায় আনতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে সেশনজ্যাম না থাকলে, এই বিষয়ে অনার্স বা মাস্টার্স করেও মোটামুটি দ্রুত একটি চাকুরী পাওয়া যেতে পারে।
আমাদের দেশে বিসিএস-এর চাকুরীর মর্যাদা এখনও মানুষের মনে অনেক উপরে। অনেক শিক্ষার্থীই ভবিষ্যতে নিজেকে বিসিএস অফিসার হিসাবে দেখতে পছন্দ করে। যাদের টার্গেট বিসিএস, পাবলিক সার্ভিস কমিশনসহ সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের চাকুরী তারা বিসিএসভুক্ত সাধারণ কোন বিষয় উচ্চশিক্ষার জন্য বেছে নিতে পারে। এক্ষেত্রে, সাবজেক্টিভের তুলনায় অবজেক্টিভ বিষয় নির্বাচন বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে। কেননা, এইসব সাবজেক্টের পরীক্ষায় নন্বর বেশী তোলা যায়। এরমধ্যে অনেক বিষয়ই বিসিএস-এর বাইরেও শিক্ষকতা অথবা উন্নয়নমূলক অথবা গবেষণাধর্মী প্রতিষ্ঠানে কাজে আসতে পারে যেমন - ইংরেজী, বাংলা, সমাজবিজ্ঞান, সমাজকল্যাণ, গনিত, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ইতিহাস, ইসলামের ইতিহাস, দর্শন, পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, জীববিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, মনোবিজ্ঞান, ভূগোল, ব্যবস্থাপনা, হিসাববিজ্ঞান। এক্ষেত্রে একটি ব্যাপার উল্লেখ করা দরকার যে, সভ্যতা আর বানিজ্যের প্রসারের সাথে সাথে ‘ইংরেজী’র প্রয়োজনীয়তা উত্তোরত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে । বাংলাদেশও এই প্রবণতার বাইরে নয়। দেশে ভাল ইংরেজী জানা একজন শিক্ষকের প্রয়োজনীয়তা যে কতটুকু তা পাবলিক পরীক্ষাগুলিতে ‘ইংরেজী’ বিষয়ে ফলাফল থেকেই সহজে উপলব্ধি করা যায়।
একটা সময় ছিল, যখন মা-বাবারা তাঁদের মেধাবী সন্তানকে ভবিষ্যতে ‘ডাক্তার’ অথবা ‘ইন্জিনিয়ার’ হিসাবে দেখতে পছন্দ করতেন। ব্যবসা-বানিজ্যের প্রসারে কি এইদুটি বিষয়ের মূল্যায়ণ কমে গিয়েছে? উত্তর হলো মোটেও না। তবে, ইন্জিনিয়ারিং-এর বেশ কিছু নতুন শাখার বিস্তার হয়েছে এবং একটির তুলনায় আরেকটি শাখার ( Department ) গুরুত্বের তারতম্য হয়েছে। ইন্জিনিয়ারিং অথবা বিজ্ঞান-এর নতুন যে বিষয়গুলি আজকাল বেশী চাকুরীর ক্ষেত্রে তৈরী হচ্ছে তাহলো - কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইন্জিনিয়ারিং, টেক্সটাইল ইন্জিনিয়ারিং, লেদার টেকনোলজি, টেলিকমিউনিকেশন, কমিউনিকেশন টেকনোলজি, সিরামিক টেকনোলজি, আরবান (নগর উন্নয়ন) ম্যানেজমেন্ট, জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং, বায়োটেকনোলজি, কৃষিবিজ্ঞান প্রভৃতি। এছাড়া ইন্জিনিয়ারিং-এর সনাতন কিছু বিষয়ের চাহিদা এখনও অটুট রয়েছে। তার মধ্যে ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক্স, সিভিল, মেকানিক্যাল প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। যে যে সেক্টরে এইসব বিষয়ের চাহিদা প্রচুর তা একটু স্মরণ করিয়ে দিতে চাই। প্রধান সেক্টরগুলি হলো - গার্মেন্টস এন্ড টেক্সটাইল, টেলিফোন অপারেটর, টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি, সিরামিক ইন্ডাষ্ট্রী, ওষুধ শিল্প, পাওয়ার (বিদ্যুত) সেক্টর, রিয়াল এস্টেট প্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ( Infrastructure like Bridge, Culvert, Roads & Highways ) । আর আমাদের দেশের সাধারন মানূষের জন্য চিকিত্সক আর চিকিত্সা সেবা এতটাই অপ্রতুল যে, একজন চিকিত্সক এমবিবিএস পাশ করার পরেই যেকোন ফার্মেসীতে বসে চিকিত্সা সেবা প্রদান করতে পারে। এখানে আরও একটি ব্যাপার উল্লেখযোগ্য যে, বাইরের দেশেও ইন্জিনিয়ার বা ডাক্তারের চাহিদা প্রচুর। যারা ভবিষ্যতে অষ্ট্রেলিয়া, মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, আমেরিকা বা কানাডাতে চাকুরী করতে চায়, তাদের জন্য এই প্রফেশন দুটি যথেষ্টই সহায়ক হবে।
আরও কিছু সাবজেক্ট, যা বর্তমান অবস্থার প্রেক্ষাপটে যথেষ্ট চাহিদার সৃষ্টি করছে এবং সামনের দিনগুলিতেও করবে তার দিকে লক্ষ্য করা যেতে পারে। হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, হোটেল ম্যানেজমেন্ট, ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং, ফ্যাশন ডিজাইনিং, গনমাধ্যম ও সাংবাদিকতা ( Mass media & Journalism ), ফিল্ড এন্ড আ্যনিমেশন, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং প্রভৃতি অন্যতম। অনেকেই আজকাল এগুলির মধ্যে নিজের ঝোঁক অনুযায়ী কোন একটি সাবজেক্ট নিযে পড়াশুনা শেষ করে নিজেই কোন ফার্ম দিয়ে বসছেন। এছাড়া আইন বিষয়ে পড়াশুনা শেষেও চাকুরীর পাশাপাশি পেশাগত চর্চা চালিয়ে যাওয়া যায়।
আজকাল বাহারী নামে নতুন নতুন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজ স্থাপিত হচ্ছে। এদের কয়েকটির মান নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ থাকলেও, দু’একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে যোগ্য ছেলেমেয়ে বের হচ্ছে। চাকুরীদাতা প্রতিষ্ঠানগুলিও এদের মধ্য থেকে ভবিষ্যত এক্সিকিউটিভ গড়ে নিচ্ছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরেও এসব প্রাইভেট প্রতিষ্ঠান যুগোপযোগী সিলেবাস প্রণয়নে যথেষ্ট আন্তরিক । সময় থাকতেই এসব কোর্স কারিকুলাম নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করা এবং নিজের পছন্দ, মেধা আর আর্থিক সার্মথ্য অনুযায়ী সাবজেক্ট চয়েস করার চেষ্টা করা শিক্ষার্থীদের জন্য জরুরী।
পরিশেষে একটি কথাই বলতে চাই, আমাদের দেশ একটি জনবহুল দেশ। আপাত: দৃষ্টিতে মনে হতে পারে এত লোকের কর্মসংস্থান আমাদের মত গরীব দেশের জন্য শুধু দুষ্করই নয় অসম্ভবও বটে। এই মতামতের সাথে দ্বিধা প্রকাশ না করেও যে কথাটি জোর গলায় বলতে চাই তাহলো, বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠিত কোম্পানি মোটা অংকের মাইনে দিয়েও যোগ্য কর্মী পাচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানগুলি হয় বাইরে থেকে লোক আনছে অথবা, একে ওকে দিয়ে ঠেকা দিয়ে কোনরকমে কাজ চালিয়ে নিচ্ছে।
আজ, এইচএসসি পাশের পরে, একজন শিক্ষার্থী কিছুটা সময় যদি এই ব্যাপারগুলি নিয়ে চিন্তা করে এবং তদানুযায়ী একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে, ক্যারিয়ারের বাকিটা সে একজন পেশাদার খেলোয়াড়ের মতই খেলে যেতে পারবে। ‘ক্যারিয়ার’ হতে পারে পেশাদার খেলোয়াড়ের জীবনের মতই আনন্দদায়ক এক পেশা । আর এব্যাপারে অভিভাবকদের ভূমিকা হতে পারে অনস্বীকার্য ।


আহমদ ইসলাম মুকসিত
চেয়ারম্যান, বিডিজবস

Subscribe For Free Updates!

We'll not spam mate! We promise.